
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
“নো ওয়েজ বোর্ড,নো মিডিয়া” শিরোনামে ২১ দফা দাবি সহ সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবিতে সারাদেশে কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মুন্সীগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়ন।”নো ওয়েজ বোর্ড,নো মিডিয়া”-এই স্লোগানে শনিবার(১ নভেম্বর)সকাল ১১টায় মুন্সীগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার শতাধিক সাংবাদিক এতে অংশ গ্রহন করে।এ সময় বক্তারা বলেন-দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য ঘোষিত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়ায় পেশাজীবী সাংবাদিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।অবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবি জানান।একজন সাংবাদিকের ন্যূনতম বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটি নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।বক্তারা আরও বলেন- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সব কালা আইন বাতিল, সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন,এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার করতে হবে।আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত গঠন করতে হবে।অন্যথায় আমরা দেশব্যাপী আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।২১ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে-চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ,গণমাধ্যমে নারী সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন,ও অবসরকালীন সুবিধা চালু করা সহ ২১ দফা দাবী উপস্থাপন করেন। ১.’নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করতে হবে। ২.অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে। ৩. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া,রেডিও,সংবাদ সংস্থা,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করতে হবে।দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে না।অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হয়নি।অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে।তাই বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।একইভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে।আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তা-ই হচ্ছে। ৫.সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন নির্ধারণ করতে হবে।সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে ২ দিন ছুটি ভোগ করে।অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ২ দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু রয়েছে।সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না।এতে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে ৬.সাংবাদিক হত্যা,হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।৭.সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে। ৮.আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে।সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হন। আর এসব মামলা ঘাড়ে নিয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। থানা বা কোর্ট নয়,সংবাদসংক্রান্ত সব মামলা শ্রম আদালতে করতে হবে ৯. সংবাদপত্র,সংবাদ সংস্থা, রেডিও,টেলিভিশন,অনলাইন, মাল্টিমিডিয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত জাতীয় সংবাদমাধ্যম নীতিমালা’প্রণয়ন করতে হবে।এই সমন্বিত নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য ভিন্ন নীতিমালা থাকবে।অনেক নীতিমালা প্রণয়ন না করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে সেটি প্রয়োগ করা ও মেনে চলা সহজ হবে।১০. সংবাদপত্র,অনলাইন,টেলভিশন, রেডিও,সংবাদ সংস্থা ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজ বোর্ড করতে হবে।বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই।তাই টেলিভিশন সাংবাদিকদের চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।এটা অত্যন্ত অমানবিক। ১১.রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না।বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কারণে-অকারণে।তা ছাড়া মামলা-গ্রেপ্তারে পিষ্ট হচ্ছে।১২. কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করতে হবে। ১৩.চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ১৪.কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র,ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী,স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না। ১৫.মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দিতে হবে।জেলা পর্যায়ে কিছু পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বেতন দিলেও অধিকাংশ মিডিয়া হাউস উপজেলা প্রতিনিধিদের এক টাকাও বেতন দেয় না। উপরন্তু তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ দেওয়া হয়।সংবাদকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হয়।এটা বন্ধ করতে হবে। ১৬.তিন বছর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে। ১৭.সরকার ও গণমাধ্যম কর্তৃক দ্রুত সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ১৮.বছরের শুরুতে আগের বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর পর পর মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করে বিবেচনা করতে হবে।
১৯.পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্যামেরা,ল্যাপটপ,মোটরসাইকেল,গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বীমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে।ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিৎসা বীমার ব্যবস্থা,জীবন বীমা,প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদকর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে।নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বিশেষ করে তাঁদের জন্য আলাদা রেস্টরুম রাখতে হবে। ২০. সাংবাদিকদের তৈরি প্রতিবেদনের কারণে যেসব ফৌজদারি মামলা আছে তা প্রত্যাহার ও বাতিল করতে হবে।২১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।