মোঃ রাজু মিয়া, বিশেষ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক বছরে ৬১৪টি স্বাভাবিক প্রসব করাতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসক ও মিডওয়াইফরা। দিনমজুর গোপাল টুডুর স্ত্রী কৃষ্ণা টুডু (২৪)। কিছুদিন আগে মা হয়েছেন কোনো রকম অস্ত্রোপচার ছাড়াই। হাসপাতাল, চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, ওষুধ–পথ্য কোনো কিছুর অভাব হয়নি। নবজাতক নিয়ে হাসপাতালও ছেড়েছেন হাসতে হাসতে। কারণ, সন্তান প্রসবের জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি তাঁকে। উল্টো হাসপাতাল ছাড়ার আগে বিনা মূল্যে মাসখানেকের ওষুধ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কৃষ্ণা টুডুর মতো আরও কয়েক শ নারীর গল্পটা এমন আনন্দের। তাঁরা সবাই নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফদের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসবসেবা দিয়ে খুশি হাসপাতালটির মিডওয়াইফরাও। একেকটা স্বাভাবিক প্রসবের খবরে হাসপাতালজুড়ে আনন্দ বয়ে যায়। মিডওয়াইফদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে কে কয়জন সুস্থ, স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতে পারলেন।
নিরাপদ মাতৃত্ব, মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাভাবিক প্রসবকে রীতিমতো উৎসবে পরিণত করেছে এই হাসপাতাল। প্রতি মাসে সর্বাধিক স্বাভাবিক প্রসব করানো মিডওয়াইফকে পুরস্কৃত করা হয় এখানে। দেওয়া হয় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য মান্থ’ খেতাব। গত এক বছরে হাসপাতালটিতে ৬১৪ জন অন্তঃসত্ত্বার স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।
হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক প্রসব হয় ডেলিভারি ইউনিটে। এই ইউনিটে আছে ডেলিভারি ওয়ার্ড ও লেবার রুম। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লেবার রুমে স্বাভাবিক প্রসবের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ডেলিভারি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ রঞ্জিতা মল্লিক বলেন, প্রসবপ্রক্রিয়াকে সহজ আর নিরাপদ করতে এখানে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও ছয়জন মিডওয়াইফের সমন্বয়ে গঠিত সম্পূর্ণ আলাদা ডেলিভারি ইউনিট থাকায় মা ও শিশুর চিকিৎসায় এখানে কোনো ব্যত্যয় হয় না। এ ছাড়া প্রসবজনিত জটিলতা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ, গর্ভকালীন ও প্রসবপূর্ব চেকআপ—এই সবই সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য হাসপাতালমুখী করেছে। আগে এই হাসপাতালে মাসে ১০ থেকে ১২টি শিশু স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নিত। এখন মাসে ৫০টির বেশি শিশু স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম হচ্ছে।
আরেক মিডওয়াইফ লাভলী বানু বলেন, ‘বর্তমানে এখানে আমরা ছয়জন মিডওয়াইফ কাজ করছি। এই ছয়জনের মধ্যে প্রতি মাসে সর্বাধিক ডেলিভারি করানো মিডওয়াইফকে হাসপাতাল থেকে পুরস্কৃত করা হয়। এটা আমাদের খুব অনুপ্রেরণা দেয়। এতে আমরা মিডওয়াইফরাই প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসব করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করি।’
এ ব্যাপারে নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নওগাঁয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।